আজ বৃহস্পতিবার, ২০শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সমন্বয়হীন অগোছালো বিএনপি!

অগোছালো বিএনপি

অগোছালো বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
সমন্বয়য়হীনতার অভাবে অগোছালো নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। আন্দোলন সংগ্রামের এক সময়ের রাজপথ কাঁপানো দলটিকে বর্তমানে রাজপথেই খুঁজে পাওয়া দুস্কর। নারায়ণগঞ্জের বিএনপি ও এর অংগ সংগঠণগুলোর সক্রিয় ভুমিকা ছিল ৯০ স্বৈরাচারি বিরোধী আন্দোলন থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ছন্দেই ছিল এ জেলার বিএনপির রাজনীতি।

হঠাৎই করে ছন্দ পতন। আর এরই ধারাবাহিকতায় আন্দোলন সংগ্রামের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিএনপিকে এখন রাজপথের দলই হিসেবেই মনে হচ্ছেনা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে। আন্দোলন সংগ্রাম বলতে তারা বুঝায়, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করা। আর এ জেলাতে বিএনপি কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিগুলো পালন করে পুলিশকে অনুনয় বিনিনয় করে। পুলিশ যদি তাদের ৫ মিনিট সময় দেয় তারা ২ মিনিটে কর্মসূচি শেষ করে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশের হামলা মামলাকে উপেক্ষা করে তৃণমূল নেতাকর্মীরা নেত্রীর মুক্তির দাবীতে রাজপথে কর্মসূচি পালন করলেও যাদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, সেই শীর্ষ নেতাদের গাঁ ছাড়া ভাব, সুবিধাবাদী ও নিজেদের মধ্যে মতানৈক্যের ফলে দিন দিন পিছিয়ে পরছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি।

নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব, আভ্যন্তরিন বিভেদ, একে অপরকে না মানা, নেতৃত্বের কোন্দল সব মিলিয়ে সমন্বয়হীনতার অভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি রাজপথের লড়াকু দল থেকে রাজপথবিহীন দলে রুপান্তরিত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই অবস্থার ফলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

বিএনপির নেতাকর্মীরা জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি গত বছরের ফেব্রুয়ারীতে গঠন হওয়ার পর প্রায় এক বছরে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে উজ্জীবিত করতে পারেননি। বরং জাতীয় বা দলীয় কর্মসূচি পালনে বারবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর সর্বপ্রথম জেলা বিএনপির বড় আয়োজন কর্মীসভায়ও চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। জেলা বিএনপির সহ সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস সে অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন।

এছাড়াও চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানার প্রতিবাদে ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের ধাওয়ায় পন্ড হওয়ার পর তেমন কোন কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিও আন্দোলন বিমুখ। যে কোন কর্মসূচি সভাপতির ব্যাক্তিগত কার্যালয়ে করে সাংগঠনিক দায় সারছেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা কর্মী সম্মেলন নিয়ে একটু আশার আলো দেখছিলেন। কর্মী সম্মেলন দিয়ে হয়তো উজ্জিবিত হবে বিএনপি। কিন্তু সে আশায়ও গুড়ে বালি। আপাতত হচ্ছেনা কর্মী সম্মেলন। কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে নারায়ণগঞ্জের টিম প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু রাজনৈতিক কাজে ব্যস্ত থাকায় কেন্দ্র নির্ধারিত সময় অনুযায়ী যথাসময়ের মধ্যে

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কর্মী সম্মেলন হচ্ছে না
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জের সাত থানায় ১৩টি মামলায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির প্রায় সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী আসামী। পুলিশি হামলা মামলায় জর্জড়িত নেতা কর্মীরা।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এটিএম কামাল।
তিনি জানান, যথাসময়ে কর্মী সম্মেলন করার ব্যাপারে প্রস্তুতি থাকলেও টিম প্রধান বরকত উল্লাহ বুলু দলীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় ১০ এপ্রিলের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছেনা। তবে চলতি মাসের মধ্যেই কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হবে।

এবিষয়ে মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বিএনপির প্রাণ শক্তি তৃনমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তারা ক্ষুব্ধ ও আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। বিএনপির যে কোন সভা সমাবেশে আগের তুলনায় বর্তমানে তৃনমূলের উপস্থিতি বেশি। তারা স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহন করে। বিএনপি যতবার ক্ষমতায় এসেছে তৃনমূলের উপর নির্ভর করেই ক্ষমতায় এসেছে।

কর্মী সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে কর্মী সম্মেলন স্থগিত করা হয় নাই। একটু পিছিয়েছে। বিভাগীয় ও জেলা সম্মেলন চলছে। সময়মতো আমাদের জেলাতেও কর্মী সম্মেলন হবে।
নেতায় নেতায় অনৈক্য ও দ্বন্দ্ব এবং সমন্বয়হীনতার অভাব বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে নেদায় নেতায় আমাদের কোন দ্বন্দ্ব নেই। নেতৃত্বের প্রতিযোগীতা আছে। নেতৃত্বের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে।

তিনি আরও বলেন, আমি নেতা না। আমি বিএনপির সাধারন একজন কর্মী। এবং তৃনমূলের সাথে কর্মী হয়েই থাকতে চাই।
মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এটিএম কামাল বলেন, বিএনপির বর্তমান অবস্থান আগের তুলনায় অনেক ভালো। যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা বা অনৈক্য নেই। সবাই আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। গ্রেফতার হামলা, মামলা, আর যে ভাবে বিভিন্ন এজেন্সির লোকজনকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে তারপরও তারা রাজপথে আসে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর যে ভাবে গায়েবী মামলা দেয়া হয়, ১৩ টি মামলায় বিএনপি ও এর অংগ সংগঠনের শীর্ষ থেকে শুরু করে তৃনমূল পর্যন্ত প্রায় ১৪ থেকে ১৫ শ’ জন নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়। এই অবস্থায় বিএনপির নেতাকর্মীরা যে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যেটুকু সময়ের জন্য ও আসেন তার জন্য আমি তাদের স্যালুট জানাই।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পূর্বে তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা যেন না করা হয় এবং সরকারের পাতা ফাঁদে পা না দেয়ার জন্য। নেত্রীর নির্দেশে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ